নেতা চর্চা

নেতা  চর্চা  

-Debasish Majumdar

   রাজ্যটার নাম পশ্চিমবঙ্গ । নেতার নাম অনেক। দেশের স্বাধীনতার সময় যেটা ছিলো মানবিক ও আন্তরিক। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক আর প্রচার কেন্দ্রীক। যেমাটিতে সময়ের সাথে সাথে ভাবনা চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাক্তিগত সমষ্টিগত নয়। যেমাটি অর্থনীতিবিদ থেকে বিশ্বকবি,বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড় থেকে শিল্পপতি, সুচিকিৎসক থেকে চলচ্চিত্রে অস্কার জয়ী। বিজ্ঞানী থেকে শিল্পীর-সকলেরই জন্মদাত্রী জননী এই বাংলার মাটি। যেদেশের শিক্ষা,সংস্কৃতি ঐতিহ্য যুগ যুগান্তর ধরে বহমান। বিশ্ববাসীর সামনে বারে বারে দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। যে মাটিতে কাজী নজরুল ইসলামের এর মত কবি হিন্দু মুসলমান এর মধ্যে সম্প্রতি রক্ষার্থে আজীবন সাহিত্য চর্চা করে গেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধন উৎসব পালন করে সব সম্প্রদায়কে একত্রিত করবার প্রয়াস গ্রহন করেছিলেন। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় এর মত মানুষগুলোর জন্মস্থান। যে মাটিতে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আতুর ঘর ছিলো।

  কিন্তু যেই সব কাহিনী এখন অতীত, সেই মাটিতে আজ অস্থিরতার একটা আবহাওয়া বিরাজমান। সে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হোক আর অখ্যাত গ্রামের কৃষকই হোক। তাই বর্তমানে তরুন তথা ছাএ সমাজ সমাজসেবা,জনসেবা শব্দগুলোর মানে কী তা আজ ভূলে গিয়ে, রাস্তার মোড়ে আড্ডা মারতে। অপভাষা প্রয়োগ করতে, মদ্যপান করে দাদাগিরি করতে মেতে উঠছে। অর্ধেক বিদ্যা অর্জন করেই ক্লাস শিক্ষায় একটার পর একটা ক্লাস পার হচ্ছে। চরিত্র তৈরী না করেই রাজনীতির খেলা খেলতে নামছে।

  তবে এই সমস্ত নিয়ন্ত্রণ করবার মূলে রয়েছে নেতা নামক একটা ক্ষমতা। যারা সমস্ত বিষয় হস্তক্ষেপ করে এবং মানুষের ব্যবহারে প্রধান চালিকাশক্তি। তবে নেতা সম্প্রদায় মানুষগুলো কতগুলো নির্দিষ্ট চরিএ ব্যাক্তি বিশেষে নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে। এই নেতা সম্প্রদায়কে কয়েকটি ভাগ করা যেতে পারে। যা নিম্নে পর্যায়ক্রমে আলোচনা হল।

  প্রথমতঃ সেলফি নেতা:এই ধরনের নেতা সম্প্রদায়রা সব সময় সেলফি তুলতে পছন্দ করেন। যেকোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে। বর্তমানে নবতম সংযোজন সোশ্যাল মিডিয়া, নেতা সম্প্রদায় এই বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। এই নীতিতে চলা নেতারা সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করেন। তার ছবি কতজন দেখল?, কতজন মন্তব্য করলেন?, কী ধরনের মন্তব্য করলেন?, ইত্যাদি ইত্যাদি।

   দ্বিতীয়ত: পকেট নেতা: এই সম্প্রদায়ের নেতারা অপেক্ষাকৃত তার থেকে উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেন। তারা যদি কখনো কোনো রকম খারাপ কাজ করেন। ওই উচ্চ পদস্থ নেতারা তাদের রক্ষাকারী। তবে এই পর্যায়ের নেতারা সব শ্রেনীর সবার সাথেই সম্পর্ক রেখে চলেন।কারন পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী তারাও সময়ের সাথে পরিবর্তিত হন।

  তৃতীয়ত: সংগঠন নেতা: এই সম্প্রদায় এর নেতারা সংগঠন বলতে তার ঘর, পরিবার, সংসার। সংগঠনের ভূল-ভ্রান্তি করলেও তাদের চোখে পড়ে না। সংগঠনের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। আর সংগঠনকে কতটা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা যায় এবং সংগঠনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সাধারণ মানুষ ভয় পেতে বাধ্য হয়।

   চতুর্থত: মন্তব্য নেতা: এই সম্প্রদায় এর নেতারা প্রতিটি জায়গায় নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরেন। মাঝে সাধারণ মানুষের কাছে বিখ্যাত কিংবা মনের জায়গা করে নেবার জন্য বিতর্কিত মন্তব্য করেন। যাতে উপস্থিত সভায় কিংবা অনুষ্ঠানে উপস্থিত মানুষেরা উৎসাহিত হয়ে কোনো কাজ করেন।

   পঞ্চমত: পদের নেতা: এই সম্প্রদায় এর নেতারা সব সময় চেষ্টা করেন পদ পেতে চান। সেই চেষ্টায় করেন, বহু সময় তা পেয়ে ও যান। তাদেরকে একটু পদ দিলে সব রকম সুযোগ সুবিধা সম্ভব। অনুষ্ঠান মঞ্চে যদি তাদের একটু সম্মান জানানো যায়, তাহলে আয়োজক সংগঠন আগামী দিনে তার থেকে সব রকম সহযোগিতা থেকে একপ্রকার সুনিশ্চিত।

    তবে বর্তমান সময়ে উপযুক্ত নেতা সম্প্রদায় মানুষের বড়ই অভাব।সমাজের কী দেশের অগ্রগতির জন্য একজন নেতা সম্প্রদায় নেতা প্রয়োজন। একটা বয়স্া মানুষের দায়িত্ব নিয়ে বলতে হবে এ আমার আত্মীয়। একটা কৃষকের মাথায় হাত রেখে বলতে হবে আমার ভাই। একটা প্রকল্প এর কাজ করে বলতে হবে আমি করতে পেরেছি দশজনের ব্যবহার এর জন্য। তার মাধ্যম হোক নতুন নেতা সম্প্রদায়ের মানুষ।

Share:

No comments:

Post a Comment

Blog Archive

Vote Geeti

Vote Geeti

Hello Evening Kolkata

Hello Evening Kolkata

Recent Posts

Search This Blog